যারা উত্তম চরিত্র ও গুণাবলির অধিকারী তারা মানবজাতির জন্য আদর্শ ও অনুসরণীয়। আর যাদের স্বভাব-চরিত্র মন্দ তারা পরিহারযোগ্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ উভয় শ্রেণির মানুষের বর্ণনা দিয়েছেন; যেন মানুষ ভালোদের অনুসরণ এবং মন্দদের থেকে দূরে থাকতে পারে। ইমাম কুরতুবি (রহ.) আদর্শের পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আদর্শ হলো এমন বিষয়, যা মানুষ সব কাজে ও সব সময়ে অনুসরণ করে থাকে। নবী-রাসুল (আ.) মানবজাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এবং তাঁরাই মানবজাতির জন্য আদর্শ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাঁদের অনুসরণের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন, সুতরাং তুমি তাদের পথের অনুসরণ কর। বলো, এর জন্য আমি তোমাদের কাছে পারিশ্রমিক চাই না, তা তো শুধু বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৯০)
কোনো সন্দেহ নেই, সব নবী-রাসুল (আ.) মানবজাতির জন্য আদর্শ ও অনুসরণীয় ছিলেন। তবে আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে আছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ২১) নবী-রাসুল (আ.) মানবজাতির জন্য আদর্শ এবং মহানবী (সা.) সর্বোত্তম আদর্শ। কেননা তাঁরা ছিলেন মাসুম তথা আল্লাহ কর্তৃক সুরক্ষাপ্রাপ্ত এবং তাঁদের সমগ্র জীবন ছিল ঐশী নির্দেশনায় পরিচালিত। সাইয়েদ কুতুব শহীদ (রহ.) বলেন, ‘নবীজি (সা.)-এর জীবনচরিত, তাঁর বাস্তব জীবন এবং তাতে যা কিছু আছে তার সব আসমানি আহ্বানের প্রকৃতি দ্বারা সুবাসিত। তিনি আসমানি আলোয় পা ফেলে এগিয়েছেন। যার বিভা প্রকাশ পেয়েছে তাঁর পরিবার ও নিকটজনদের জীবনচরিতে। ফলে তাঁরা হয়ে ওঠেন মুক্তিপ্রাপ্ত মানুষের দৃষ্টান্ত।’ (ফি দিলালিল কোরআন : ৭/২৫৩)
সুরা আহজাবের ২১ নং আয়াতে আল্লাহ – ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে’ বাক্য যুক্ত করেছেন। যার দ্বারা বোঝা যায়, নবীজি (সা.)-এর অনুসরণ করা মুমিনের ঈমানের দাবি। তবে কারো ঈমান যদি দুর্বল হয় এবং রাসুল (সা.)-এর প্রতি তাঁর ভালোবাসা দুর্বল হয়, তবে তার প্রতি আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘বলো, আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসুলের আনুগত্য করো।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৫৪) আল্লাহ পবিত্র কোরআনে আদর্শ মানুষ তথা নবী-রাসুলদের পরিচয় তুলে ধরেছেন, তাঁদের আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন এবং অনুগতদের জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা থেকে সাবধান থাকে তারাই সফলকাম।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৫২)
সাধারণ অবস্থায় মানবজাতির জন্য আদর্শ মহানবী (সা.)-এর আনুগত্য করা। এটা ঐচ্ছিক নয়, আবশ্যিক। কেননা আল্লাহ তাঁর নবীর অনুগত্যকে নিজের আনুগত্য বলে ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ রাসুলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিলে তোমাকে তাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক প্রেরণ করি নাই।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৮০) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে আমার আনুগত্য করল সে আল্লাহরই আনুগত্য করল এবং যে আমার অবাধ্য হলো সে আল্লাহরই অবাধ্য হলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭১৩৭)
যেসব বিষয় শরিয়ত-সংশ্লিষ্ট নয়, বরং জাগতিক, সেগুলো অনুসরণ করা আবশ্যক নয়। তা অনুসরণ করা ঐচ্ছিক। প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, জাগতিক বিষয়ে নবীজি (সা.)-এর অনুসরণও বরকতশূন্য নয়। কেননা এর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি মুমিনের ভালোবাসা প্রকাশ পায়। আর নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয়পাত্র না হই। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫)
একজন মুমিন, যিনি তাঁর ঈমান ও ইসলামের ক্ষেত্রে যত্নশীল, তিনি দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য আদর্শ। আদর্শ হিসেবে তাঁরা নবী-রাসুলদের সঙ্গে তুল্য নন, তবে তাঁদের ভেতর থেকেও যে আল্লাহ অনুসরণীয় মানুষ তৈরি করেন তা নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা বোঝা যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং স্মরণ করো, যখন ইবরাহিমকে তার প্রতিপালক কয়েকটি কথা দ্বারা পরিক্ষা করেছিলেন এবং সেগুলো সে পূর্ণ করেছিল। আল্লাহ বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করেছি। সে বলল, আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও? আল্লাহ বললেন, আমার প্রতিশ্রুতি জালিমদের জন্য প্রযোজ্য নয়।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৪)
ইসলামি সমাজব্যবস্থার মূল ভিত্তিই হলো আনুগত্য। নিরঙ্কুশ আনুগত্য ছাড়া পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কোথাও শান্তি-শৃঙ্খলা আসে না। সর্বত্রই দেখা দেয় সীমাহীন অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। অস্থির হয়ে ওঠে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব। তাই ইসলামে আনুগত্যের গুরুত্ব অপরিসীম। আনুগত্যের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, আল্লাহর নির্দেশ মান্য করো, নির্দেশ মান্য করো রাসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা নেতৃস্থানীয়, তাদের। তারপর যদি তোমরা কোনো বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়ো, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি প্রত্যর্পণ করো, যদি তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাসী হয়ে থাকো। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৯) রাসূল সা.এর এই দুনিয়ায় পদার্পণ মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম ঘটনা। এর চেয়ে মহান, এর চেয়ে খুশির এবং এর চেয়ে পবিত্র কোনো ঘটনা এই জমিনে আর কখনো সংঘটিত হয়নি। এ কারণে আমাদের সমাজে, বিশেষত উপমহাদেশে ১২ রবিউল আউয়াল কার্যত একটি আনন্দ উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়। রবিউল আউয়াল মাসের আগমন হলে সিরাতুন্নবী আর মিলাদুন্নবীর সীমাহীন আয়োজন শুরু হয়। এটি সত্য যে নবী করিম সা. এর পবিত্র স্মৃতি অনেক বড় আনন্দের। এর সমান আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমাদের সমাজে রাসূলুল্লাহর সা. পবিত্র স্মৃতিকে যেন রবিউল আউয়াল মাস; এমনকি শুধুমাত্র ১২ রবিউল আউয়ালের জন্য নির্দিষ্ট করে ফেলা হয়েছে।
ইসলামে যদি কারো জন্মদিন উদযাপনের ধারণা থাকত তাহলে আর কারো হোক না হোক নবীজির সা. জন্মদিন অবশ্যই উদযাপিত হতো। কিন্তু নবুয়তের পর দীর্ঘ ২৩ বছর তিনি জীবিত ছিলেন। প্রতি বছরই রবিউল আউয়াল মাস এসেছে, কিন্তু তিনি ১২ রবিউল আউয়াল উদযাপন করেননি। এরপর দোজাহানের সরদার মুহাম্মদ সা. দুনিয়ার সফর থেকে বিদায় নিলেন। তিনি প্রায় সোয়া এক লাখ সাহাবি রেখে গেলেন এ দুনিয়ায়। তাঁরা নবীজির একটি নিঃশ্বাসের বিনিময়ে নিজেদের পুরো জীবন উৎসর্গ করে দিতে পারতেন। তিনি ছিলেন তাঁদের প্রাণাধিক প্রিয়। কিন্তু একজন সাহাবিও এমন পাওয়া যাবে না যিনি প্রকাশ্যে এ দিনটিতে সমাবেশ, জুলুস, প্রদীপ প্রজ্ব¡লন ও পতাকা উত্তোলন কিংবা অন্য কোনো উপায়ে তা উদযাপন করেছেন। সাহাবিরা এমন করেননি কেন? করেননি কারণ ইসলামে এর অবকাশ নেই। এটি স্রেফ কোনো আনুষ্ঠানিকতার দ্বীন নয়। অন্যান্য ধর্মে যেমন কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করলেই ধর্ম পালন করা হয়ে যায়, ইসলাম তা নয়। ইসলাম আমলের দ্বীন। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি মানুষ নিজের ইসলাহর চিন্তায় ডুবে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে নবীজির জন্মদিন উদযাপনের এ ধারণা আমাদের মধ্যে এসেছে ঈসায়ীদের কাছ থেকে। প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস নাম দিয়ে ঈসা আ. এর জন্মদিন উদযাপন করা হয়। কিন্তু ইতিহাসে চোখ বুলালে দেখা যাবে ঈসা আ.আসমানে আরোহণের অন্তত ৩০০ বছর পর্যন্ত তাঁর জন্মদিন উদযাপনের কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। তাঁর হাওয়ারি বা সাহাবাদের মধ্যে কেউ এই দিন উদযাপন করেছেন,এমনটিও নয়। প্রায় তিনশ বছর পর কিছু লোক এ বিদআত শুরু করেছেন। সে সময়ে যারা সঠিক খ্রিস্টধর্মের ওপর সু-দৃঢ় ছিলেন তারা এতে আপত্তি তুলেছেন। তারা জানতে চেয়েছেন- তোমরা এমন সিলসিলা শুরু করছো কেন যা ঈসার শিক্ষা নয়। কিন্তু জবাব এসেছে, ‘এতে সমস্যা কোথায়? এটি তো এমন বাড়াবাড়ির কিছু নয়। আমরা সেদিন জমায়েত হবো এবং ঈসার স্মরণ করব। তাঁর শিক্ষা আলোচনা করব, মানুষকে আমল করতে উদ্বুদ্ধ করব। আমরা তো কোনো গুনাহর কাজ করে ফেলছি না!’ প্রথম দিকে ২৫ ডিসেম্বর চার্চে শুধু সম্মেলনই হতো। একজন পাদ্রি হযরত ঈসার শিক্ষা ও সিরাত আলোচনা করতেন। ব্যস, সম্মেলন সমাপ্ত হতো। শুরুতে এ পদ্ধতি আসলে খুব নিষ্পাপই ছিল। কিন্তু সময় অতিবাহিত হতে হতে তারা ভাবলেন শুধু পাদ্রির বক্তব্য দিয়ে চলবে না। এ আয়োজন খুব নীরস প্রকৃতির। এজন্য তরুণ ও শৌখিন মেজাজের মানুষজন এতে শামিল হয় না। মানুষের আগ্রহ গড়ে তুলতে হলে অনুষ্ঠানটি আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। প্রথমে তারা এতে সঙ্গীত সংযোজনের চিন্তা করলো। তার সাথে শুরু হলো কবিতা পাঠ। কিন্তু সঙ্গীতে তারা তৃপ্ত হতে পারেনি। তারা এতে নাচ-গানও যুক্ত করলো। হাসি-তামাশার আরও উপাদান যুক্ত হলো। এক পর্যায়ে তা এমন অবস্থ গেছে যে, তা স্রেফ সাধারণ একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। নাচ-গান আছে, সঙ্গীত আছে, আর আছে জুয়া ও সমস্ত নেশাদ্রব্য। অর্থাৎ দুনিয়ার সমস্ত খারাবি এতে যুক্ত হয়েছে। অথচ ক্রিসমাস ঈসা আ. এর শিক্ষা আলোচনার জন্য শুরু হয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা মানুষের মন ও তার দুর্বলতা সম্পর্কে ভালোভাবে ওয়াকিবহাল। তিনি জানেন মানুষ কী থেকে কী করতে পারে। এজন্য তিনি কারো জন্মদিন উদযাপনের কোনো ধারণা দেননি। যেমনটা ক্রিসমাসের সাথে হয়েছে, তেমনি হয়েছে মিলাদুন্নবীর ক্ষেত্রেও। অন্যথা যদি হতো- তাহলে যে সময়ে মক্কার কাফেররা তাঁকে সরদার বানানোর জন্য এবং মাল ও দৌলত তাঁর পায়ে এনে ফেলে দেয়ার জন্য কিংবা আরবের বাছাইকৃত সুন্দরী তাঁকে সোপর্দ করার প্রস্তাব দিয়েছিল, তিনি তা মেনে নিয়ে তাঁর শিক্ষা ও দ্বীনের দাওয়াত ছেড়ে দিতেন। নেতৃত্বও পাওয়া যেত, সম্পদও পাওয়া যেত। কিন্তু নবীজি সা. জবাব দিয়েছিলেন, ‘যদি তোমরা আমার এক হাতে সূর্য আর অন্য হাতে চাঁদ এনে দাও, তবুও আমি আমার শিক্ষা ও দাওয়াত থেকে সরে যাব না।’ রাসূল সা. কেন এসেছিলেন পৃথিবীতে? এর সঠিক জবাব মিলবে পবিত্র কুরআনে। সূরা আহযাবে তাঁর আগমনের কারণ ধ্বনিত হয়েছে এভাবে- আমি নবী করিম সা.-কে উত্তম আদর্শস্বরূপ তোমাদের কাছে প্রেরণ করেছি। যাতে তোমরা তাঁকে অনুসরণ করো। যারা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান আনে এবং বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করে তাদের জন্য তাঁকে প্রেরণ করা হয়েছে। (সূরা আহযাব : ২১)। যদি বলা হয় আদর্শের কী প্রয়োজন? আল্লাহ তাঁর কিতাব নাজিল করেছেন, আমরা তা পড়ে তার ওপর আমল করতে পারতাম। আসলে মানুষের ফিতরাত বা প্রবৃত্তি এমন নয়। একটি কিতাব তার ইসলাহর জন্য পর্যাপ্ত হতে পারে না। তাকে শিল্প, জ্ঞান আর দক্ষতা শেখানোর সক্ষমতা কোনো গ্রন্থের নেই। বরং মানুষকে শেখানোর জন্য বাস্তব আদর্শ বা নমুনার প্রয়োজন হয়। যতক্ষণ কোনো নমুনা সামনে থাকবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত শুধুমাত্র কোনো কিতাব পড়ে শিল্প ও জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা মানুষের ফিতরাত এভাবেই সাজিয়েছেন।এজন্য আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য নবী-রাসূল দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। এ কারণেই কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি নবী সা.-কে এজন্য পাঠিয়েছি যাতে তোমরা দেখতে পাও যে কুরআন তোমাদের জন্য শিক্ষা আর নবীজি এই শিক্ষার ওপর আমলের প্রত্যক্ষ নমুনা। পবিত্র কুরআন মাজিদে আরেক জায়গায় কী চমৎকার উল্লেখ করা হয়েছে- ‘তোমাদের কাছে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে একটি কিতাব এসেছে। তার সঙ্গে এসেছে একটি নূর।’ (সূরা মায়েদা : ১৫)। আল্লাহ বলেছেন, তোমরা সেই নমুনাটি দেখে তাঁর অনুসরণ করো। এই লক্ষ্যেই আমি নবী করিম সা.-কে প্রেরণ করেছি। এজন্য প্রেরণ করিনি যে তাঁর জন্মদিন উদযাপন করা হবে কিংবা জশন উদযাপন করেই মনে করা হবে তাঁর হক আদায় করা হয়ে গেছে! বরং এজন্য পাঠিয়েছি যেন তাঁর আনুগত্য করো।
রাসূল সা. এর সুন্নতের অনুসরণ এবং তা পালনে তাঁর সাহাবিরা দুনিয়াব্যাপী দৃষ্টান্ত রেখেছেন। আর আজকের মুসলমানরা ভাবছে এই সুন্নতের ওপর আমল করলে লোকে কী বলবে! এই সুন্নতের ওপর আমল করলে তো মানুষে বিদ্রুপ করবে, অমুক দেশের মানুষ হাসবে! আর এর পরিণতিতে সারা দুনিয়ায় মুসলমানরা আজ অপদস্থ হচ্ছে। বর্তমানে সারা দুনিয়ার এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা মুসলমান। এত সংখ্যক মুসলমান তো এর আগে কখনোই ছিল না। আজ মুসলমানের হাতে যত সম্পদ তা অতীতের মুসলমানের হাতে ছিল না। নবীজি সা.বলেছেন, এমন এক জামানা আসবে তোমাদের সংখ্যা অনেক হবে কিন্তু তোমরা এমন হবে যেমনটা হয় স্রোতের শ্যাওলা; যার নিজের কোনো এখতিয়ার থাকে না। আজ আমাদের যে পরিস্থিতি, দুশমনকে সন্তুষ্ট করতে আমাদের সব কিছু আমরা পরিত্যাগ করেছি। এমনকি নিজের চেহারাও বদলে ফেলেছি। আপাদমস্তক তাদের অনুকরণ করে আমরা দেখিয়ে দিয়েছি যে আমরা তোমাদের গোলাম। এতদসত্ত্বেও তারা সন্তুষ্ট নয়, বরং প্রতিদিন আঘাত করছে। কখনো ইসরাইল আঘাত করে তো কখনো অন্য কোনো দেশ। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেন, ‘তুমি যদি আমার আদেশ মেনে চলো তাহলে আল্লাহ তোমাকে বন্ধু বানিয়ে নিবেন।’ (সূরা আলে ইমরান : ৩১)। অতএব, যদি ছোট ছোট কাজও সুন্নতের আলোকে আদায় করা হয় তাহলে আল্লাহর বন্ধুত্ব অর্জন হতে থাকবে। আর আপাদমস্তক অনুসরণ করলে পরিণত হতে পারা যাবে আল্লাহর একজন পরিপূর্ণ বন্ধু।
লেখক : এম এ কবীর, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সভাপতি, ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি।
Leave a Reply